সর্বোত্তম জিকির


সকালবেলা ফজরের নামাজের পর অর্থবহ ৪টি কালেমার জিকির। প্রতিদান প্রাপ্তিতে অতুলনীয়। সকালের পুরো সময় ধরে ইবাদতের চেয়ে ওজনে ভারী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষায় ৪ কালেমা সমৃদ্ধ এই জিকির সকালবেলার সর্বোত্তম জিকির। হাদিসে বর্ণিত সেই সেরা জিকিরটি কী?
হাদিসের বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে একটি ঘটনা। ফজরের নামাজের পর লম্বা সময় নামাজের স্থানে বসেছিলেন উম্মুল মুমিনিন হজরত জুওয়ায়বিয়া। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গে কথা বললেন এবং সকালবেলার সর্বোত্তম জিকির সম্পর্কে তাকে জানালেন। হাদিসটি তিনি এভাবে বর্ণনা করেন-
উম্মুল মুমিনিন হজরত জুওয়ায়রিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যূষে (ফজরের নামাজ শেষ করে) তাঁর কাছ থেকে বের হলেন। যখন তিনি ফজরের নামাজ আদায় করলেন তখন তিনি নামাজের জায়গায় ছিলেন।

এরপর তিনি দোহার পরে (সূর্য ওঠার বেশকিছু সময় পর) ফিরে এলেন। তখনও তিনি বসেছিলেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি সেই অবস্থায়ই আছো?
তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘আমি তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর ৪টি কালেমা ৩বার পড়েছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ; তার সঙ্গে ওজন করলে এই কালেমা চারটির ওজsনই বেশি হবে।
কালেমাগুলো উচ্চারণ এই-: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি; ওয়া রিদাআ নাফসিহি; ওয়া যিনাতা আরশিহি; ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’
অর্থ : ‘আল্লাহ পবিত্র আর প্রশংসাও তার; এ পবিত্রতা ও প্রশংসা তার সৃষ্ট বস্তুর সমান। তার নিজের সন্তুষ্টু সমান। (পবিত্রতা ও প্রশংসায় তিনি) তার আরশের ওজনের সমান। (পবিত্রতা ও প্রশংসায় তিনি) তার বাণীসমূহ লেখার কালির পরিমানের সমান।’ (মুসলিম)
মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজর নামাজের পর হাদিসে উল্লেখিত কালেমা দ্বারা মহান আল্লাহর প্রশংসা করা। পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনায় সবার হওয়া। আর তাতেই মিলবে প্রকৃত সফলতা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবি শেখানো ফজরের নামাজের পর পড়ার ৪ কালেমা সমৃদ্ধ তাসবিহটি বেশি বেশি পড়ার এবং আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ফরজ নামাজের পর প্রয়োজনীয় কিছু আমল

আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক ফরজ নামাজের শেষে কিছু দোয়া আছে, যে ব্যক্তি ওইগুলো পড়ে বা কাজে লাগায় সে কখনো ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। (সহীহ মুসলিম, ১২৩৭)
(১) রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে ৩ বার আসতাগফিরুল্লাহ্‌ বলতেন। (মুসলিম, ১২২২)
(২) তারপর ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম’ – এটি পরতেন । (মুসলিম, ১২২১)
(৩) সুবহা-নাল্লা-হ (৩৩ বার)। আলহাদুলিল্লাহ্ (৩৩ বার)। আল্লাহু-আকবার (৩৩ বার)। (লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা-লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর) (১ বার)। এগুলো পাঠে গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেয়া হয়।) (মুসলিম, ১২৪০)
(৪) আয়াতুল কুরসী (সূরা বাক্বারার আয়াত-২৫৫) ১ বার পড়া। ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে তার আর বেহেস্তের মধ্যে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো দূরত্ব থাকেনা। (নাসাঈ)
আয়াতুল কুরসীর বাংলা উচ্চারণ:
‬ আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বিয়্যুম লা তা’খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।
‪অর্থ‬:
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
আয়াতুল কুরসীর ফজিলত-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, সূরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম)
(৫ ‘আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার’ ৭ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। সে দিন বা সে রাতে মারা গেলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।
(৬) সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও সূরা নাস, প্রত্যেকটি ৩ বার করে, ফজর ও মাগরিবের পর। রাসূল (সা.) বলেন, সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো পাঠ করলে তোমার আর কিছুরই দরকার হবে না।
(৭) দরুদ শরীফ ১০ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। কেয়ামতের দিন রাসূল (সা.) এর শাফা'আত লাভ করবে।
বাংলা উচ্চারণঃ
আল্লা-হুম্মা সল্লি আ'লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ'লা আ-লি মুহা'ম্মাদ, কামা সল্লাইতা আ'লা ইবরাহীমা ওয়া আ'লা আ-লি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হা'মীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক আ'লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ'লা আলি মুহা'ম্মাদ, কামা বা-রাকতা আ'লা ইব্রাহীমা ওয়া আ'লা আ-লি ইব্রাহীম। ইন্নাকা হা'মীদুম মাজীদ।
(৮) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে,(সুব্‌হানাল্লা-হি ওয়াবিহামদিহী) তার পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে। (বুখারী ৭/১৬৮, নং ৬৪০৫; মুসলিম ৪/২০৭১, নং ২৬৯১)
এখানে পাঠকদের জন্য প্রত্যেক নামাজের পরের তাসবিহ, জিকির ও আমল উল্লেখ করা হলো। এক.
রাসুল (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে ৩ বার আসতাগফিরুল্লাহ্‌ বলতেন। (মুসলিম, হাদিস : ১২২২) দুই.
তারপর ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম’ – এটি পরতেন । (মুসলিম, হাদিস : ১২২১) ADVERTISEMENT তিন.
সুবহানাল্লাহ [৩৩ বার], আলহাদুলিল্লাহ [৩৩ বার], আল্লাহু আকবার [৩৩ বার], [লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু; লাহুল মুলকু; ওয়ালাহুল হামদু; ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির) (১ বার)। এগুলো পাঠে গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১২৪০) চার.
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো বাঁধা থাকবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৯৪৪৮; তাবারানি, হাদিস : ৭৮৩২) পাঁচ.
‘আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার’ ৭ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। সে দিন বা সে রাতে মারা গেলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮০) ছয়.
সুরা ইখলাস, ফালাক্ব ও সুরা নাস, প্রত্যেকটি ৩ বার করে, ফজর ও মাগরিবের পর। রাসুল (সা.) বলেন, সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো পাঠ করলে তোমার আর কিছুরই দরকার হবে না। সাত.
দরুদ শরিফ ১০ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। কেয়ামতের দিন রাসুল (সা.)-এর শাফাআত লাভ হবে। আট.
রাদ্বিতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনাঁও, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা— এই দোয়াটি ৩ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। এটা পড়লে রাসুল (সা.) হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, আল্লাহ উক্ত ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করবেন। (ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ০৬/৩৬) নয়.
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে, «سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ» (সুব্‌হানাল্লা-হি ওয়াবিহামদিহি) তার পাপগুলো মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৫; মুসলিম, হাদিস : ২৬৯১) মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উক্ত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাকে সহ সারা বিশ্বের সকল মুসলিম নর-নারীকে উক্ত আমলগুলো যথাযথ ভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

রমজান মাসের শুরুতে যা হয়।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রমাযান (রমজান) মাসের প্রথম রাত হয়, শয়তান ও...